ঢাকায় শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) তারিখে ঢাকার শেরাটন হোটেলে শ্রীলঙ্কার ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করে। এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (SLBCCI) এবং শ্রীলঙ্কা অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (SLAB)।

বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ৩০০-র বেশি অতিথি, যাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রধানগণ, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা, বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, গবেষণা সংস্থা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং শ্রীলঙ্কান প্রবাসীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপাল উইরাক্কোডি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা স্মরণ করেন, যা উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জনসাধারণের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বে পরিণত করতে আগ্রহী।
হাইকমিশনার শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এবং ব্যবসা-বান্ধব নীতিমালার বিষয়েও আলোকপাত করেন, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে শ্রীলঙ্কা এখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটি বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত।

বাংলাদেশ বর্তমানে শ্রীলঙ্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে, হাইকমিশনার বলেন যে, প্রস্তাবিত পছন্দসই বাণিজ্য চুক্তি (Preferential Trade Agreement) এবং অন্যান্য বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়িক স্বার্থ বাংলাদেশেও ক্রমশ বাড়ছে উল্লেখ করে, তিনি জানান যে, শ্রীলঙ্কার কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, খুচরা বাজার এবং লজিস্টিক খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা শ্রীলঙ্কান ব্যবসা ও কর্মসংস্থানকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।

শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের অন্যতম প্রধান সমুদ্র বন্দর, লজিস্টিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে, হাইকমিশনার বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরকে কলম্বো বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, কলম্বো পোর্ট সিটি প্রকল্প এবং ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রীলঙ্কার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ের সফর ও বর্ধিত বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT), ফার্মাসিউটিক্যাল, বিনিয়োগ ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া, তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দৃঢ়তা এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC) ও বিমসটেক (BIMSTEC)-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে ঢাকা-কলম্বো-ঢাকা রুটে দুটি রিটার্ন টিকিটের লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হয়।


শ্রীলঙ্কার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কান প্রবাসী নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি, অতিথিদের জন্য সুস্বাদু নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল, যেখানে শ্রীলঙ্কার পর্যটন স্থাপনা ও আকর্ষণীয় স্থানসমূহের ভিডিও প্রদর্শিত হয়, যা অতিথিদের বেশ প্রশংসা কুড়ায়।