২০২৪ সালে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি
ইমতিয়াজ আহমেদঃ
বাংলাদেশিদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় ও লাভজনক পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠছে হিমালয় রাষ্ট্র নেপাল। গত তিন বছরে নেপালে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে নেপালে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু সীমিত করায় এ সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি ও ঢাকা সূত্র। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ের পর থেকে ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৪৮,৮৪৮ বাংলাদেশি নেপাল ভ্রমণ করেছেন, যেখানে ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৬,৪৮৩। ২০২৩ সালে ৩৬,৪৮৩ বাংলাদেশির মধ্যে ২৮,৩৬২ জন পুরুষ ও ৮,১১৩ জন নারী ছিলেন। ২০২২ সালে নেপাল ভ্রমণ করেছিলেন ২৫,০০০ এর বেশি বাংলাদেশি, যা প্রাক-মহামারিকালের কাছাকাছি।
একজন সিনিয়র সম্পাদক, যিনি জীবনে ৫০ বারের বেশি নেপাল ভ্রমণ করেছেন, বলেন যে তিনি নেপালকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেশ মনে করেন।
নেপাল বাংলাদেশিদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করায় এবং ভারতের ঢাকা, সিলেট, খুলনা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত হাইকমিশন অফিসগুলোর ভিসা সীমাবদ্ধ করার ফলে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নেপাল সফর করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (TOAB) এক সদস্য।
২০২৪ সালে ১১.৪৭ লক্ষ বিদেশি পর্যটকের আগমন
নেপালের জনপ্রিয় দৈনিক ‘দ্য হিমালয়ান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশটিতে ১.১৪ মিলিয়নের বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যা দেশটির পর্যটন খাতে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে মোট ১১,৪৭,০২৪ জন পর্যটক নেপাল প্রবেশ করেন।
২০২৩ সালে ১০,১৪,৮৮২ জন পর্যটক নেপাল সফর করেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৫.০৫% বেশি।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের গবেষণা, পরিকল্পনা ও মনিটরিং বিভাগের প্রধান মণিরাজ লামিছানে জানান, বর্তমানে পর্যটক সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নিকট ভবিষ্যতে আরও বেশি পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের মধ্যে ১.৬ মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে মোট ৫৭,৭২৬ পর্যটক নেপালে যান। এর মধ্যে ২১,৩৫৭ জন ভারতীয়, ৫,৫৯৩ জন চীনা, ৫,৫৬১ জন মার্কিন এবং ১,৩৭৫ জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন। এছাড়া, যুক্তরাজ্য থেকে ৩,৬৩০ জন, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১,১০২ জন এবং কানাডা থেকে ৬৫৩ জন পর্যটক নেপাল সফর করেন।
বাংলাদেশ-নেপাল পর্যটন সহযোগিতা
নেপালের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দুই দেশের পর্যটন খাত একে অপরকে পরিপূরক করতে পারে। ২০২২ সালে ২৫,০০০ এর বেশি বাংলাদেশি নেপাল সফর করলেও, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যটকের তুলনায় এটি খুবই কম। পর্যটন সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আমাদের পর্যটন সংযোগ আরও দৃঢ় করতে হবে। এছাড়া, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, মেডিকেল ট্যুরিজম এবং ইকো-ট্যুরিজমে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে।”
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (TOAB) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (ATAB) জানিয়েছে, বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে ‘সিলিগুড়ি করিডোর’ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা সহজেই ১ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে, যদি ভারত বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দেয়। সিলিগুড়ি করিডোর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অঞ্চল, যা নেপালের দক্ষিণ এবং বাংলাদেশের উত্তরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।
নেপালের পর্যটন খাতের এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।