বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) চূড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর, ২০২৫) সিউলে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু।
বৈঠকে উভয় পক্ষই সিইপিএ চুক্তিকে সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে নতুন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা আরও জোরদারে একাধিক বিষয়ে মতৈক্য হয়।
এসময় বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন উন্নয়ন সহযোগী। আমরা চাই সিইপিএ দ্রুত চূড়ান্ত হোক। এই চুক্তি হলে ইলেকট্রনিকস, মবিলিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছি। শুল্ক, রেমিট্যান্স ও কর সংক্রান্ত যেসব বিষয় তাঁরা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো আরও সহজ, দ্রুত ও আধুনিক করার লক্ষ্যে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। বিডার ৩২ দফা ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট রিফর্ম এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে।”
মতবিনিময়কালে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু বলেন, “বাংলাদেশ এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক উৎপাদন ও সেবা খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা এই উন্নয়নযাত্রার অংশীদার হতে আগ্রহী।”
মন্ত্রী ইয়ো আরও বলেন, তিনি অতীতে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি সবসময় কাছ থেকে দেখেছেন।
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু-কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “আমরা চাই কোরিয়ান ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে দেখুক কীভাবে অবকাঠামো, ডিজিটাল সেবা ও ব্যবসা সংস্কারে আমরা বাস্তব পরিবর্তন এনেছি।”
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশে ১৫০টিরও বেশি কোরিয়ান কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়া এখন বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটাড)-এর ২০২৫ সালের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে কোরিয়ার বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটিকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিনিয়োগকারী দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করবে। সফরকালে তাঁরা গত ২১ অক্টোবর সিউলে আয়োজিত “Gateway to Growth: Invest in Bangladesh” শীর্ষক বিনিয়োগ সেমিনারে অংশ নেন, যেখানে ১৫০ জনেরও বেশি কোরিয়ান বিনিয়োগকারী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, আইএফসি বাংলাদেশ-এর কারিগরি সহায়তায় প্রতিনিধিদলটি কোরিয়ার শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে একাধিক সরকারি–বেসরকারি (জি-টু-বি) বৈঠকও সম্পন্ন করেছে।











