পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
ভারত মহানন্দা নদীর ফুলবাড়ী বাঁধের ৯টি গেট এক সংগে খুলে দেয়ায় তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকায় মহানন্দা নদীর তীর রক্ষা প্রায় ৭ মিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

জানা যায় গত রবিবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) ভোর রাতে অতী বর্ষণের কারণে পাহাড়ি ঢলে মহানন্দার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌছে যায়। এতে ভারত শিলিগুড়ি শহরের ফুলবাড়ি নামক স্থানে মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত বাঁধের ৯টি গেট একসংগে খুলে দিলে ১৫-২০ ফুট পানির উঁচু ঢেউ মহানন্দার বুকে আছরে পড়ে বাংলাদেশ সীমানায় নদীর তীরে আঘাত হানে। ভারত দুপুরের পর পুনরায় বাঁধের গেট বন্ধ করে দিলে নদীর পানি কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তের ঝাড়ুয়াপাড়া নামক এলাকায় তীর রক্ষা ব্লক বাঁধের তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগে মহানন্দা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০০৩-০৪ সালে নির্মিত সিসি ব্লকবাঁধের প্রায় ৭ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া আরও কয়েক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা সিসি ব্লক বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসময় সীমান্তের উপর লাগানো গাছপালা ও একটি টিনের ঘর ভেসে যায় । এতে ঝাড়ুয়াপাড়া, কাশিমগঞ্জ ও সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামবাসী আতংকীত হয়ে পড়ে। ভারত পুনরায় বাঁধের গেট খুলে দিলে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকারে ছড়িয়ে যাবার ভয়ে অনেক পরিবার নির্ঘুম রাত জাগে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তেঁতুলিয়া মো. আফরোজ শাহীন খসরু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে জনসাধারনের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এদিকে তেঁতুলিয়ায় দলীয় কর্মসূচী নিয়ে সফরে থাকা এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য আহবায়ক সারজিস আলম খবর শোনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগে ভর দুপুরে ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামে নদীর তীর রক্ষা ভাঙ্গন বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইফে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকষণ করেন। বিকালে রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী নদীর তীর ভাঙ্গন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে জরুরী ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। আজ সোমবার সকাল থেকে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সাময়িক রক্ষার জন্য প্রাথমিকভাকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার জিও ব্যাগে বালি ভরে ফেলানো হবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়।
ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামবাসী দুলাল, নাজির, নুর আলম ও রাশেদ জানান, ভারত ৯০ দশকের পর তাদের গ্রামের উত্তর পশ্চিম তীরে পাথরের একটি গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ সহ তিনটি বিদূতের স্টীল পোল স্থাপন করে নদীর পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে দেন। তখন থেকে মহানন্দা নদীর পানি ওই গ্রোয়েন বাঁধে আঘাত পেয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত তীরে আছরে পড়ে এবং তখন থেকে নদীর পাড়ের ফসলী জমি ভাঙ্গতে শুরু হয়। পরবর্তীতে শিলিগুড়ি শহরের পাশে ফুলবাড়ি নামক স্থানে ভারত মহানন্দা নদীর উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে। উক্ত বাঁধে পানি ধরে রাখার কারণে মহানন্দা মরা নদীতে পরিণত হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসূমে বাঁধের সব কয়টি গেট একবারে খুলে দিলে নদীর বুকে ১৫-২০ ফুট পানির উঁচু ঢেউ আছরে পড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি নদীর তীরে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। এভাবে ইচ্ছাকৃত প্রতিবেশী ভারত আমাদের পানির গেট খুলে দিয়ে ক্ষতি সাধন করেন। তাদের দাবী মহানন্দা একটি আন্তঃসীমান্ত নদী এই নদীর উজানে ভারত একতরফা বাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি প্রবাহ রোধ করার পাশাপাশি জীব বৈচিত্র হুমকীতে ফেলেছে। এছাড়া তাদের প্রয়োজনে কোন রকম সকর্ততা বার্তা ছাড়াই গেট খুলে আমাদের পানিতে ডুবায়ে মারছে যা আন্তজার্তিক আইনের পরিপন্থি। আমরা বর্তমান সরকারের মাধ্যমে ভারতের এ আগ্রাসী মনোভাব থেকে রক্ষার জোর দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, আমি ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গত রবিবার এবং সোমবার পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে জিও ব্যাগে বালি ভরে প্রাথমিকভাবে রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে পঞ্চগড় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, মহানন্দা নদীর পুর্বের দেয়া সিসি ব্লক বাঁধ ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শ করেছি। প্রাথমিক ভাবে কয়েক হাজার জিও ব্যাগে বালি ভরে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মাপযোগ করে প্রকল্প বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বর্ষা মৌসূম শেষ হলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।











