পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আসন্ন বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনা সামনে রেখে বাংলাদেশের জরুরি জলবায়ু অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি অভিযোজন সহায়তা বাড়ানো, ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল (Loss and Damage Fund) বাস্তবায়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর (Just Transition) ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
রবিবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে অংশ নেন ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত যথাক্রমে ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন এবং নিকোলাস উইকস।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত করতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা।”
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পানির সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি সম্প্রদায়ভিত্তিক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “এটি কম খরচে বাস্তবায়নযোগ্য একটি সমাধান, যা শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে পারে।” তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের এসব উদ্ভাবনী ও ব্যাংকযোগ্য জলবায়ু-সহনশীল প্রকল্পে সহায়তার আহ্বান জানান।
নর্ডিক রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের সক্রিয় ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বায়ু বিদ্যুৎ, সবুজ নৌপরিবহন ও অভিযোজন অর্থায়নে সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেন।
উভয় পক্ষ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও জোরালো করতে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
রিজওয়ানা হাসান আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আসন্ন জলবায়ু আলোচনা অভিযোজন অর্থায়ন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিল বাস্তবায়ন এবং সম্প্রদায়নির্ভর স্থিতিস্থাপকতায় বাস্তব অগ্রগতি বয়ে আনবে।
এর আগে একই দিন রাজধানীর হোটেল লেক ক্যাসেলে অনুষ্ঠিত “রিজিওনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মনিটরিং অ্যালায়েন্স (RIMA) কনফারেন্স ২০২৫”-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মানুষকেন্দ্রিক বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আলোচনা, সুরক্ষা ব্যবস্থা ও জনগণের সম্মতি ছাড়া বিনিয়োগ মানুষ ও পরিবেশ—উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। ভালো বিনিয়োগ সেটিই, যা প্রকৃতিকে রক্ষা করে, জনগণের কণ্ঠকে সম্মান জানায় এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।”
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নবীদ শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. খায়রুল হাসান, যুগ্ম সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ধরিত্রী কুমার সরকার, যুগ্ম সচিব (পরিবেশ) মো. রেজাউল করিম এবং সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নয়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম উপস্থিত ছিলেন।











