October 25, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • সারাদেশ
  • পঞ্চগড়ের আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার চরে কাশফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়েছে

পঞ্চগড়ের আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার চরে কাশফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়েছে

Image

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সীমান্ত নদী মহানন্দার চরে কাশফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়েছে। ভারতের সিকিম ও নেপালের পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা সীমান্ত নদী মহানন্দা। এই নদীটি ভারতের শিলিগুড়ি শহরের গাঁ ঘেঁষে ফুলবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা ঝাড়–য়াপাড়া নামক স্থানে প্রবেশ করে। ঝাড়–য়াপাড়া থেকে তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেছে। এই দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার মহানন্দা আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে ভারত-বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে রেখেছে।

পরবর্তীতে এই মহানন্দা নদী ভারত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার ঝাড়–য়াপাড়া থেকে তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে বালুচরের উপর কোন কোন স্থানে কাশফুল শুভ্রতা ছড়াচ্ছে।

ষড়ঋতুর এ দেশে ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে শরৎকাল। এসময় রোদঝলমলে দিনে নীল আকাশে ধবধবে সাদা তুলার মতো মেঘ উড়তে থাকে। ঠান্ডা মৃদু বাতাস প্রকৃতিকে করে তোলে আরও বেশি উপভোগ্য। ঋতুবৈচিত্র্যের এই আবহাওয়ায় প্রকৃতি নিজেকে রাঙায় শুভ্র সাদারঙে। ঋতুর পালাবদলে শরৎকালে দেখা মেলে সাদারঙের আধিক্য।

এসময় তেঁতুলিয়া মহানন্দা নদীর পাড়ে সাদা বকের সারির মতো পালক ফুলিয়ে হাওয়ায় দুলতে থাকে মাইলের পর মাইল কাশফুল। শরৎ এলেই তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে প্রকৃতিপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের ভিড় জমে। আর প্রকৃতি তার রূপে মুগ্ধ করে সবাইকে।

তেঁতুলিয়া আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে চরের উপর ফুটে উঠেছে রাশিরাশি কাশফুল। লম্বা সবুজ পাতার বুক চিরে বেরিয়ে আসা থোকা থোকা কাশফুলের গুচ্ছ মাথা উঁচিয়ে তুলে ধরেছে। যদিও নদীর বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে কাশফুল ঘাসের পরিমাণ কম এবং ভারতের অংশে বেশি ভাগ পড়েছে। তবু পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু তরুণ-তরুণীরা এ কাশফুলের ছোঁয়া নিতে প্রতিদিন ভিড় করে।

অনেকে মোবাইলে ছবি তুলছেন। কেউবা আবার দু-চারটি কাশফুল ছিঁড়ে প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছেন। নানা বয়সী মানুষ এই কাশবনে আনন্দে মেতে উঠেছে। দূর থেকে দেখে মনে হয়, এক ঝাঁক সাদা বকের পালকের বিছানো চাদর শীতল হাওয়ায় দুলছে।

স্থানীয় রাজানান, ভাদ্রমাসের শেষ দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এসময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত থাকে কাশফুলের রাজত্ব। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য এবং ভোরের আভায় সোনালি রোদে উত্তরের আকাশে হিমালয় পর্বতে ভারতের শৈলশহর দার্জিলিং ও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ খালি চোখে খুব কাছাকাছি উপভোগ করতেই ঘুরতে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

পুরো শরৎকাল জুড়েই এখানে প্রকৃতির মাঝে কিছু মুহূর্ত উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় জমায় শত শত পর্যটক।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে মহানন্দা ডাকবাংলোর তীরে কাশফুল ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা লেখক ও নাট্যকার এম এস রিপন, জজকোর্টের আইনজীবী মামুন, ট্রাফিক ইনপেক্টর ফারুক ও ব্যবসায়ী রানা বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে মহানন্দার তীরে বালুর চরে কাশফুলের শুভ্রতার ছোঁয়া নিতে এসেছি। নদীর ওপারে বালুচরে বেশি কাশফুল হওয়ায় মন ছুঁয়ে যায়। বাস্তবে দেখে মনে হয় প্রকৃতির মাঝে মহানন্দার তীর যেন একরাশ সাদা পরির মেলা।

কবির ভাষায়—
‘‘মহানন্দার ওপারে রাশিরাশি কাশফুল,
সাদা পালের নৌকা যেন ভরা নদীর কূল।
কাশফুলের জলছাপ নদীতে অন্যভাব,
নদীর তীরে একঝাঁক সাদা পরির সাজ।’’

Scroll to Top