October 25, 2025

শিরোনাম

ঢাকায় মালয়েশিয়ার ৬৮তম জাতীয় দিবস পালিত

Image

রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল শেরাটন ঢাকার গ্র্যান্ড বলরুমে মালয়েশিয়ার ৬৮তম জাতীয় দিবস ও ৬২তম মালয়েশিয়া দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশন।

অনুষ্ঠানটি দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর দোয়া পাঠ করা হয়।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ সালেহ ইউসুফ রামাদান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পাশে রয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনকে সাম্প্রতিক সময়ে স্বীকৃতি দেওয়া বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং যারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি তাদের দ্রুত স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আমরা সৌদি আরব ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারও প্রশংসা করি, যারা নিউ ইয়র্কে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি সম্মেলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা সুইডেনের সাহসী পদক্ষেপও ভুলব না, যারা ১১ বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।”

“যেসব দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি, আমরা তাদেরকে অবিলম্বে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানাই, যেন তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দাঁড়ায়, বিচ্ছিন্ন সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নয়। গাজা উপত্যকার জনগণ যারা গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি, তাদের উষ্ণ শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমরা আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আশা করি, যাতে আমরা বিশ্বের অন্যদের মতো স্বাধীনতা ও মর্যাদায় বাঁচতে পারি। আপনারা যে সমর্থন দিয়েছেন তা অত্যন্ত মূল্যবান। বাংলাদেশের ও মালয়েশিয়ার জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন—এটি আমাদের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

এরপর স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার মান্যবর হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান। তিনি বলেন, “৬৮তম জাতীয় দিবস ও ৬২তম মালয়েশিয়া দিবস উদযাপন করা আমাদের জন্য এক গৌরবের বিষয়। গত বছরের অক্টোবরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাতো’ সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি মালয়েশিয়া এশিয়ার প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।”

তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দুই দেশের সম্পর্কের মূলভিত্তি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। হালাল শিল্প, প্রযুক্তি, শিক্ষা, ইসলামিক ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন, হজ ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকেও সহায়তা করতে পারে এবং প্রায় ৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কাজ করে দুই দেশের বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।

এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি মালয়েশিয়ার সরকার ও ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর মালয়েশিয়া আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর একটি। সময়ের সঙ্গে দুই দেশের অংশীদারিত্ব মানবসম্পদ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে সমৃদ্ধ হয়েছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মালয়েশিয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ বিলিয়নের বেশি। রবী, অ্যাক্সিয়াটা, এডটকো এবং মি. ডিআইওয়াইয়ের মতো কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। প্রায় ৯ লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি শিক্ষার্থী সরবরাহকারী দেশ। সাম্প্রতিক সফরে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও দক্ষতা উন্নয়নে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক আবরার রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গেও মালয়েশিয়ার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়া টেকসই সমাধানের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে।

বক্তব্যের পর কেক কেটে জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটি মনোমুগ্ধকর মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সিভিল সোসাইটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Scroll to Top