বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি ন্যায়বিচার, সংস্কার ও নবায়নকৃত আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য শক্তিশালী আহ্বান জানান।
তিনি সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে জাতিসংঘ সনদের ৮০তম বার্ষিকীতে অভিনন্দন জানান এবং জাতিসংঘের ঐতিহাসিক অর্জনগুলোর প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অধ্যাপক ইউনুস ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের রূপান্তরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি তরুণদের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় অনুপ্রেরণাদানের সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন, যা বর্তমানে “জুলাই ঘোষণার” মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানগত জবাবদিহিতা, অবাধ নির্বাচনের প্রস্তুতি, স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব অর্থনৈতিক ও শাসন সংস্কারের অগ্রগতির কথা বলেন।
তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, আন্তর্জাতিক সনদসমূহে যোগদান, জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং অতীতের অপব্যবহার রোধে গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসী শ্রমজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখে তারা দেশের অর্থনীতিতে রেকর্ড অবদান রাখছেন, আর তাদের অবদান যেমন স্বাগতিক দেশে, তেমনই দেশে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং এ বিষয়ে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং গাজায় সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করেন। তিনি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে বাংলাদেশের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু কার্যক্রম, তরুণদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ নতুন প্রযুক্তির ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও বিস্তাররোধ, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার, অর্থপাচার ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদ পাচার বন্ধ, প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য ভাগাভাগি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, আঞ্চলিক সংগঠনসমূহের পুনরুজ্জীবন এবং বহুপাক্ষিকতার সংস্কার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি “তিন-শূন্য বিশ্বের” দৃষ্টি তুলে ধরেন—শূন্য কার্বন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (দারিদ্র্য দূরীকরণে) এবং শূন্য বেকারত্ব।
তার ভাষণকালে সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা সাধারণ পরিষদের হলে উপস্থিত ছিলেন।











