বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে চতুর্থ রাজনৈতিক পরামর্শ (4th Political Consultations) মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) সকালে রাজধানীর পদ্মা রাষ্ট্র অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব অ্যাম্বাসেডর আসাদ আলম সিয়াম এবং তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বাসেডর এ. বেরিস একিনজি নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

আন্তরিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই পরামর্শ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বন্ধন পুনর্ব্যক্ত করা হয়। উভয় পক্ষ শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সম্পর্ককে আরও গভীর ও মজবুত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
বাংলাদেশ পক্ষ তুরস্ক সরকারের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিচল সমর্থন এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা জানায়। তুর্কি পক্ষও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অব্যাহত সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
দুই দেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক কমিশনের পরবর্তী সভা দ্রুত আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে। বাংলাদেশ পক্ষ তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে আহ্বান জানায় এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা পর্যালোচনা করে উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা শিল্প, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বে সন্তোষ প্রকাশ করে। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সকল রূপের বিরুদ্ধে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, বিশেষত সবুজ প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও উভয় দেশ গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশ পক্ষ ‘জুলাই বিপ্লবে’ আহতদের চিকিৎসা ও কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুরস্কের ফিল্ড হাসপাতালের অব্যাহত কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্কের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার প্রশংসা জানিয়ে উভয় দেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময়কালে উভয় দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি সম্প্রসারণকে স্বাগত জানায় এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমারেখায় একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও সংলগ্ন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। গাজায় চলমান গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয় অবসানে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং বাধাহীন মানবিক সহায়তার দাবি জানানো হয়।
জাতিসংঘ, ওআইসি এবং ডি-৮সহ বহুপাক্ষিক ফোরামে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জানায় দুই দেশ। পাশাপাশি বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দ্রুত স্বাক্ষর নিশ্চিতের বিষয়ে একমত হয়।
আলোচনার শেষে উভয় দেশ আগামী রাজনৈতিক পরামর্শ সভা আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে সম্মত হয়। বৈঠকের ফলাফল বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবে বলে দুই পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করে।











