বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত এক বছরে দেশের পর্যটন খাতে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, গতিশীলতা ও সেবা আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানানো হয়েছে, জাতীয় পর্যটন দিবসকে “গ” থেকে “খ” শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পর্যটন খাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করতে পর্যটন নীতিমালা ২০১০ সংশোধন ও হালনাগাদ করে ২০২৫ সালের সংস্করণ প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালার খসড়া প্রস্তুতির সময় অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য পরামর্শ সভা আয়োজন করা হয় এবং পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করে আরও মতামত আহ্বান করা হচ্ছে।

ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন আইন, ২০১৩ এবং ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২-এ অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির বিষয়টি স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাভেল এজেন্সির কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। গত অর্থবছরে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ৭.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১০% বেশি। এছাড়া ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করতে কমিউনিটি অংশগ্রহণমূলক পর্যটন সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ হাওর পর্যটন ও দায়িত্বশীল সমুদ্র পর্যটনের জন্য প্রাথমিক গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং জাহাজের টিকেট বিক্রির প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সফটওয়্যার সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।
পর্যটনসেবায় নিয়োজিত সেবাদানকারীদের জন্য রঙিন ছবি সংবলিত আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সেবার মান, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড দেশের ছয়টি জেলায় আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বাগেরহাটে নতুন ‘পর্যটন মোটেল এন্ড ইয়ুথ ইন’ উদ্বোধন করা হয়েছে, যা পর্যটকদের আবাসনের সুযোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোকে স্বচ্ছ ও লাভজনক করার জন্য “বিপণন কৌশল ২০২৫” প্রণয়ন করা হয়েছে। খাদ্য বিক্রিতে রশিদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মকে পর্যটনে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোক্তা তৈরির সেমিনার, বেসক্যাম্প ট্রেনিং এবং পর্যটন ভলান্টিয়ার তৈরির কার্যক্রম চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ১০০ জন পর্যটন ভলান্টিয়ার গড়ে তোলা হয়েছে। ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং শিল্প-অ্যাকাডেমিয়া সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খাদ্য উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় “টেস্ট অফ বাংলাদেশ” খাদ্য উৎসব ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দেশের পর্যটন খাতের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নের জন্য “Tourism Satellite Account (TSA)” প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রীড়া বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশে ক্রীড়া পর্যটন শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান সরকার পর্যটন খাতকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে এবং দায়িত্বশীল ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্রে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।











