বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত, দ্য রাইট অনারেবল ব্যারোনেস উইন্টারটন অব ডনক্যাস্টার ডিবিই (The Rt Hon. Baroness Winterton of Doncaster DBE) পাঁচ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের সময়সীমা ২০২৬ সালের নভেম্বরে ঘনিয়ে আসায় এই সফরটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যারোনেস উইন্টারটনের এই সফর যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা এবং পারস্পরিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে।
সফরকালে ব্যারোনেস উইন্টারটন অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন—এর মধ্যে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুফে সিদ্দিকি। আলোচনায় থাকবে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্বের বিভিন্ন দিক।
তিনি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করবেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে প্রতিশ্রুতি পুনরায় তুলে ধরা হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সফরের অংশ হিসেবে ব্যারোনেস উইন্টারটন বিমান, উচ্চশিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। চট্টগ্রামে তিনি সরাসরি পরিদর্শন করবেন যুক্তরাজ্য-সম্পৃক্ত বিনিয়োগ প্রকল্পসমূহ, যেগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।
এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যুক্তরাজ্যের Developing Countries Trading Scheme (DCTS)-এর গুরুত্ব তুলে ধরা, যার অধীনে বাংলাদেশি পণ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হবে, বিশেষ করে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে।
এছাড়া, ব্যারোনেস উইন্টারটন ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট (BII) — যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থা — এবং এর স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এসব আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশের টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন ও সবুজ অর্থায়নে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস উইন্টারটন বলেন: “যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে একটি গতিশীল ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব। আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন যাত্রাকে সমর্থন জানাতে এবং এমন নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে, যা উভয় দেশের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে। আমি আগ্রহের সঙ্গে দেখতে চাই যুক্তরাজ্য-সমর্থিত সেইসব বিনিয়োগ, যেগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করছে এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে বাস্তব মূল্য সংযোজন করছে।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক বলেন: “বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূতের ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় সফরটি প্রমাণ করে যে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিতে কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বাণিজ্য অংশীদারিত্ব দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে, এবং আমরা এই সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—পারস্পরিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে।”











