নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (NSU) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (SIPG), এইচ অ্যান্ড এইচ (হুসেন অ্যান্ড হুসেন) ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবং বিআইডব্লিউটিএ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বার্কি, ডাইক অ্যাক্সিস ও সিএসডি একাডেমির সমর্থনে এনএসইউ-এর সিন্ডিকেট হলে “ঢাকার নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা: টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিগত বিকল্প” শীর্ষক একটি নীতি সংলাপের আয়োজন করে।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী এবং বালু নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত ঢাকা শহর শিল্পবর্জ্য, পৌরসভার আবর্জনা, শহুরে বর্জ্য, অবৈধ দখল এবং জলাভূমি হারানোর কারণে মারাত্মক দূষণের শিকার। এই সংলাপে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর কৌশল প্রণয়নে একত্রিত হন।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শহরের প্রকৃতি-কেন্দ্রিক অগ্রাধিকারের অভাবের ওপর জোর দেন। তিনি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ের মতো প্রকল্পের পরিবেশগত ক্ষতির উদাহরণ তুলে ধরেন এবং একটি সফল সামগ্রিক পদ্ধতির উদাহরণ হিসেবে গঙ্গা নদীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ঢাকার নদীগুলোকে রক্ষা করতে একটি সামগ্রিক, প্রকৃতি-কেন্দ্রিক পদ্ধতি প্রয়োজন—দ্রুত সমাধান অপরিবর্তনীয় পরিবেশগত ক্ষতি রোধ করতে পারবে না।”
বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ আজাজ ঢাকার দুটি মৃত নদীর সফল পুনরুদ্ধারের কথা তুলে ধরেন এবং উৎস থেকে পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি একটি স্মার্ট ও টেকসই ঢাকা গড়ার জন্য জীববৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং এনএসইউ-এর অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ড. আবদুস সামাদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন যে ঢাকার নদীগুলো, বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা, অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্য এবং দুর্বল আইনের কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। তার সমাধানে একটি নদী সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং পরিষ্কার পরিবেশ-বান্ধব অনুশীলনের জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনার কথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এনএসইউ-এর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া নদী দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে এবং অপরিবর্তনীয় ক্ষতি রোধে সমন্বিত নীতি, আচরণগত পরিবর্তন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন—তাঁর বক্তব্যে এই বিষয়টি তিনি জোর দিয়ে বলেন। জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. অনুপম হোসেন নদী দূষণের বিপদ এবং আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি ডাক্তার, প্রকৌশলী, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণে বাস্তবসম্মত ও সাশ্রয়ী সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশনের পরামর্শক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী উল্লেখ করেন যে, দূষণের উৎস জানা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগ ও নীতি প্রণয়নে দুর্বলতার কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা নদী ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে কঠিন বর্জ্য নিয়ন্ত্রণসহ টেকসই ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
ডাইক অ্যাক্সিস-বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. রুই ওভাস বলেন যে, বেশিরভাগ নদী দূষণের কারণ হলো অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন। তিনি উৎসে সমাধানের জন্য স্মার্ট, স্বয়ংক্রিয় এবং টেকসই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বার্কি এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. মার্টিন অ্যালকেমিয়ার বলেন, নিখুঁত সমাধানের জন্য অপেক্ষা না করে কাজ শুরু করা উচিত। তাঁর মতে, কালক্ষেপণ করার চেয়ে ধীরে ধীরে উন্নতি করা বেশি কার্যকর।
সেশন চেয়ার, এনএসইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রায়শই আলোচনা হলেও দূষণকে তার উৎস থেকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। তিনি এসআইপিজি-এর নীতি-সংক্ষেপকে একটি কার্যকর কৌশলপত্র হিসেবে উল্লেখ করেন এবং একটি আরও টেকসই ও প্রাণবন্ত ঢাকার আশাপ্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানটি এইচ অ্যান্ড এইচ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক এম. সাফাক হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং এতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন এনএসইউ-এর এসআইপিজি-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ তৌফিক এম. হক।
এই সংলাপ নীতিনির্ধারক, শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, গবেষক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকার নদীগুলোকে রক্ষা করা, জনস্বাস্থ্য উন্নত করা, জীবিকা রক্ষা করা এবং একটি স্থিতিস্থাপক নগর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।











