কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (KOICA) বাংলাদেশ অফিস বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার হোটেল শেরাটনে আয়োজিত ‘কোরিয়া বাংলাদেশ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (KBAA) নাইট ২০২৫’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের ৩০ বছরের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের যাত্রা উদযাপন করেছে।
বার্ষিক এই ‘KBAA নাইট’-এ ২০০-রও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন কোয়িকা অ্যালামনাই, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এবং কোয়িকা প্রকল্পের প্রতিনিধি। এ বছর অনুষ্ঠানটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কোয়িকা বাংলাদেশে তাদের তিন দশকের উন্নয়ন যাত্রা ও সহযোগিতার মাইলফলক অতিক্রম করেছে — যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও টেকসই উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্যে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদর্শিত হয় একটি প্রামাণ্য ভিডিও “KOICA & Bangladesh – 30 Years of Friendship”, যেখানে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোয়িকার উন্নয়নমূলক অবদান তুলে ধরা হয়। গত তিন দশকে কোয়িকা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে জন প্রশাসন ও সুশাসন, জনস্বাস্থ্য, পরিবহন আধুনিকায়ন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা (TVET), এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কোয়িকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. জি হুন কিম বাংলাদেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত মি. পার্ক ইয়ং-সিক। তিনি বলেন, “ODA থেকে উন্নয়নের পথে কোরিয়ার যাত্রা আজ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কোরিয়া এখন বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ এবং সেমিকন্ডাক্টর, স্মার্টফোনসহ নানা শিল্পে বৈশ্বিক উৎপাদনশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
তবে, আজকের কোরিয়া গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সহায়তার মাধ্যমে। তাই আমরা আমাদের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।”
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “বাংলাদেশে KOICA’র ৩০ বছরের নিরলস অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। ১৯৯৫ সাল থেকে KOICA স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, জলবায়ু সহনশীলতা এবং সুশাসনসহ বিভিন্ন খাতে ১৪টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
KOICA’র প্রোগ্রামের মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশে ২,৬০০-এরও বেশি পেশাজীবী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এদের নেতৃত্বে আজ কেবিএএ বাংলাদেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আপনারা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার জীবন্ত সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।
কোরিয়া ও বাংলাদেশের এই দীর্ঘ বন্ধুত্ব ১৯৭৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। দুই বছর আগে আমরা দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছি। এখন সময় এসেছে আগামী ৫০ বছরের সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের। আমি বিশ্বাস করি, KOICA এবং এর অ্যালামনাই সদস্যরা এই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর ও ফলপ্রসূ করবে।”
কে-বি-এএ-এর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অ্যালামনাই সদস্যরা বক্তব্যে কোয়িকার বিশ্বব্যাপী মানবসম্পদ উন্নয়ন উদ্যোগ এবং বাংলাদেশি অ্যালামনাইদের প্রশিক্ষণ শেষে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের কথা স্মরণ করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ২,৬০০-রও বেশি কর্মকর্তা কোয়িকার ফেলোশিপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন এবং ১,৭০০-রও বেশি কোরিয়ান স্বেচ্ছাসেবক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন — যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে।
২০২৫ সালে কোয়িকা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একাধিক সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে — যার মধ্যে রয়েছে “Capacity Building for ERD Officials in Bangladesh”, “Strengthening Sustainable Infrastructure Development Capacity” এবং “Old-Age Income Security Systems” ইত্যাদি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে চলতি বছরে ৫০-এরও বেশি কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন, যা প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নযাত্রাকে এগিয়ে নিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে নতুন কে-বি-এএ নির্বাহী কমিটির নির্বাচন, “Best Field Case” উপস্থাপন, এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন নির্বাহী সদস্যদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে Letter of Appreciation প্রদান করা হয়।
সমাপনী বক্তব্যে কোয়িকার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস সুজিন কং সকল অ্যালামনাই ও অংশীদারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব কেবল প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় — এটি মানুষের, আবেগের ও অগ্রগতির গল্প।”
অনুষ্ঠানের শেষে নৈশভোজ ও সৌহার্দ্য বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের অ্যালামনাই ও অংশীদারদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয় এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পুনরায় দৃঢ় করা হয়।











