জাতিসংঘে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারমূলক বিষয়াবলির উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) জাতিসংঘ মহাসচিব হিজ এক্সেলেন্সি আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যা রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীভূত হবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলনটি আয়োজনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেন, যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে সম্মেলনে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যা সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ড. রহমান রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কবার্তা দেন, যা সংঘাত কবলিত এ অঞ্চলে আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি জানান, রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ ইতিবাচক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে, যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকানো যায়, জীবনযাত্রা পুনরায় শুরু করা যায় এবং স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায়।
এছাড়া, ড. রহমান বর্তমান বৈদেশিক সহায়তার ক্রমাগত কমে যাওয়ার বিষয়টি মহাসচিবের নজরে আনেন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যথাযথ তহবিল সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি অনুরোধ করেন, যেন মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা ও গ্রহণকারীরা নির্বিঘ্নে সহায়তা পেতে পারে এবং সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, বৈষম্য ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি থেকে মুক্ত থাকে। পাশাপাশি, বিমান হামলা ও বোমা বর্ষণ বন্ধেরও আহ্বান জানান।
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিব হিজ এক্সেলেন্সি আন্তোনিও গুতেরেস তার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এবং রাখাইন রাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা স্মরণ করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বৈষম্য ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি গত আট বছর ধরে প্রায় ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অপরিহার্য ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করেন। মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তহবিল সংগ্রহে তার ব্যক্তিগত সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ড. রহমান বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টার বিষয়ে মহাসচিবকে অবহিত করেন, যা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। জাতিসংঘ মহাসচিব তার সাম্প্রতিক দাভোস বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কাঠামোতে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত নজরদারির আশ্বাস দেন।
ড. খলিলুর রহমান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) প্রশাসক হিজ এক্সেলেন্সি আখিম স্টাইনার এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল হিজ এক্সেলেন্সি জ্যাঁ-পিয়ের লাক্রোয়া-এর সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিজ এক্সেলেন্সি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।