বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজনকে কেবল স্বল্পমেয়াদি বা ধাপে ধাপে উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কৃষি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরমূলক উদ্যোগে রূপ দিতে হবে।

বুধবার (১ অক্টোবর, ২০২৫) ব্যাংককে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়া-প্যাসিফিক ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন ফোরামের মন্ত্রীপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। এবারের ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “Resilience for All: Catalyzing Transformational Adaptation”।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে চরম দুর্বলতার মধ্যেও অভিযোজন সম্ভব। কিন্তু এই অভিযোজনকে রূপান্তরমূলক পর্যায়ে নিতে হলে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তি, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারই টেকসই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশের বিগত কয়েক দশকের সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশটি শুধু জীবন বাঁচায়নি, ভূমি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রও সংরক্ষণ করেছে। তিনি বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান এবং ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (NAP)-এর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ৮টি থিমেটিক এরিয়ায় ১১৩টি হস্তক্ষেপ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (BCCTF) বিশ্বের প্রথম দেশীয়ভাবে গঠিত অভিযোজন তহবিল, যা ইতোমধ্যে শতাধিক জলবায়ু প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।
দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের Cyclone Preparedness Programme (CPP)-এর প্রশংসা করে রিজওয়ানা বলেন, বর্তমানে ৭৮,০০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন—যাদের অর্ধেকই নারী। দেশে নির্মিত হয়েছে ৪,২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ নৌযান এবং কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগাম সতর্কতা প্রচার ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ খরা, লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল ধান উদ্ভাবন করেছে। ভাসমান কৃষি, হাওর ও বরিন্দ্র অঞ্চলে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার, এবং তাংগুয়ার হাওরের কো-ম্যানেজমেন্ট জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উপকূলীয় বাঁধ ও মিষ্টি পানির ব্যবস্থাপনাও লবণাক্ততা প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের অভিযোজন সাফল্যের মূল ভিত্তি হলো শক্তিশালী নীতি ও সুশাসন, জনগণভিত্তিক নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন কাঠামো। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ পরিবেশ সুরক্ষায় আইনি ভিত্তি প্রদান করেছে।
তিনি আরও বলেন, Climate Fiscal Framework, Bangladesh Climate Change Trust Fund, এবং আন্তর্জাতিক উৎসসমূহ যেমন GEF, GCF, LDCF ও Adaptation Fund-এর মাধ্যমে অর্থায়ন বাড়ানো গেলে অভিযোজন কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন – কেন্টারো দোই, জাপানের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ভাইস মিনিস্টার; জন ওয়ারবার্টন, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনাল ডিপার্টমেন্টের জলবায়ু ও পরিবেশ প্রধান; ডেচেন সেরিং, ইউএনইপি এশিয়া-প্যাসিফিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক; নোরালিন উয়, ফিলিপাইনের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব; এবং আনুজ মেহতা, এডিবি থাইল্যান্ড রেসিডেন্ট মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর।
সূত্র: Ministry of Environment, Forest and Climate Change, Bangladesh.











